রাজসিংহ
দুই শ্রেণীর লোক, তাঁহার কৃপায় অন্ত:পুরমধ্যে প্রবেশ করিত; এক প্রণয়ভাজন ব্যক্তিগণ–অপর, যাহারা তাঁহার কাছে সংবাদ বেচিত।
বলিয়াছি, জেব-উন্নিসা একজন প্রধান politician, মোগলসাম্রাজ্যরূপ জাহাজের হাল, এক প্রকার তাঁর হাতে। তিনি মোগলসাম্রাজ্যের “নিয়ামক নক্ষত্র” বলিয়াও বর্ণিত হইয়াছেন। জানা আছে, “politician” সম্প্রদায়ের একটা বড় প্রয়োজন–সংবাদ। কোথায় কি হইতেছে, গোপনে সব জানা চাই। দুর্মুখের মুনিব রামচন্দ্র হইতে বিসমার্ক পর্যন্ত সকলেই ইহার প্রমাণ। জেব-উন্নিসা এ কথাটা বিলক্ষণ বুঝিতেন। চারি দিক হইতে তিনি সংবাদ সংগ্রহ করিতেন। সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাঁর কতকগুলি লোক নিযুক্ত ছিল। তার মধ্যে তসবিরওয়ালা খিজির একজন। তার মা নানা দেশে তসবির বেচিতে যাইত। খিজির তাহার নিকট হইতে সংবাদ সংগ্রহ করিতেন। দরিয়া বিবির ভগিনীও আতর ও সুর্মা বিক্রয়ের উপলক্ষে দিল্লীর ভিতর ভ্রমণ করিয়া অনেক সংবাদ সংগ্রহ করিত। এই সকল সংবাদ দরিয়া জেব-উন্নিসার কাছে দিয়া আসিত। জেব-উন্নিসা প্রতি বার কিছু কিছু পুরস্কার দিতেন। ইহাই সংবাদ-বিক্রয়। সংবাদ-বিক্রয়ার্থ দরিয়া মহাল মধ্যে প্রবেশ করিতে বাধা না পান, তজ্জন্য জেব-উন্নিসা তাঁহাকে একটা পরওয়ানা দিয়াছিলেন। পরওয়ানার মর্ম এই, “দরিয়া বিবি সুরমা বিক্রয়ের জন্য রঙ্মহালে প্রবেশ করিতে পারে |”
কিন্তু দরিয়া বিবি রঙমহালে প্রবেশকালে হঠাৎ বিঘ্ন প্রাপ্ত হইল। দেখিল–মবারক খাঁ রঙমহাল মধ্যে প্রবেশ করিল। দরিয়া তখন প্রবেশ করিল না–একটু বিলম্ব করিয়া প্রবেশ করিল।
দরিয়া প্রবেশ করিয়া দেখিল, যেখানে জেব-উন্নিসার বিলাসগৃহ, মবারক সেইখানে গেল। দরিয়া একটা বৃক্ষবাটিকার ছায়ার মধ্যে লুকাইয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিল।